মাছের আঁশ রপ্তানি করে আয় হচ্ছে কোটি টাকা!

বাংলাদেশের মানুষের প্রিয় খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন জাতের মাছ। প্রতিদিনই বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ পর্যন্ত প্রচুর মাছ রান্না হয়। আর মাছ পরিস্কারের সময় যে আঁশ বের হয়, তা আগে সাধারণত বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হতো। কিন্তু আজকের দিনে সেই আঁশই দেশের জন্য নিয়ে এসেছে বৈদেশিক মুদ্রা এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মাছের আঁশের বার্ষিক রপ্তানি প্রায় ২৫০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৩-২৪ সালে এটি ছিল ২৩৭ কোটি টাকা। শুধু বিদেশি মুদ্রা অর্জনই নয়, এই খাতে দেশের হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে নারীদের জন্য।
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের বিভিন্ন শহরের হাট-বাজার থেকে বছরে প্রায় ৩০ হাজার টন মাছের আঁশ সংগ্রহ করা হয়। স্থানীয় পর্যায়ে পরিস্কার ও শুকানো এই আঁশের প্রায় ৯০ শতাংশই রপ্তানি হয় জাপান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও চীনের মতো দেশে। সেখানে এটি ব্যবহার হয় বিউটি প্রোডাক্টস, ওষুধের ক্যাপসুল, বায়োডিগ্রেডেবল প্যাকেজিং এবং আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
উদ্যোক্তা আরিফুল হক বলেন, “১০-১২ বছর আগে বেকার অবস্থায় মাছের আঁশ সংগ্রহ শুরু করি। এখন আমার দুটি কারখানা রয়েছে, যেখানে বছরে ২৫০ থেকে ২৭০ টন আঁশ সংগ্রহ করি। কেজি প্রতি আঁশ বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়।” তার মতো অন্তত ৬০ জন ব্যবসায়ী আছেন, যারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আঁশ সংগ্রহ করে পরিস্কার ও শুকিয়ে রপ্তানিকারকদের কাছে বিক্রি করেন।
কম পুঁজিতে, সহজলভ্য কাঁচামাল এবং তুলনামূলক কম পরিশ্রমে এই খাতে উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব। রাজধানীসহ দেশের বড় বাজারগুলোতে তরুণরা এই খাতে যুক্ত হয়ে মাসে ১৫ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। কুমিল্লা, পঞ্চগড়, টাঙ্গাইল, নড়াইল, ফেনী, বরিশাল, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ছোট ছোট কারখানা গড়ে উঠছে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, “মাছের আঁশে থাকা কোলাজেন ব্যবহার হচ্ছে খাদ্য, ওষুধ ও প্রসাধনী শিল্পে। এটি দেশের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত।”
ঢাকার মৎস্য কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান যোগ করেছেন, “উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত। এই খাত থেকে দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব।”

