পাটজাত পণ্যের জাগরণ: বিশ্ববাজারে আবারও ‘সোনালী আঁশ’-এর স্বপ্ন

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ‘সোনালী আঁশ’ পাট একসময় দেশের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি ছিল। সময়ের পরিবর্তনে কৃত্রিম ফাইবারের দাপটে পাটশিল্পে মন্দা নেমে এলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবারও নতুন করে জাগছে এ খাতের সম্ভাবনা। পরিবেশবান্ধব ও টেকসই বিকল্প হিসেবে পাটজাত পণ্যের প্রতি বিশ্বব্যাপী আগ্রহ বাড়ছে দ্রুত।
জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন নীতিতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হওয়ায়, পাটের তৈরি ব্যাগ, প্যাকেজিং সামগ্রী, ফ্যাশন পণ্য ও ঘর সাজানোর উপকরণের চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারের ‘প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাট’ প্রকল্প ইতোমধ্যেই ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের বাজারে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে। বিশেষ করে “সোনালী ব্যাগ”—যা পাট থেকে তৈরি বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের বিকল্প—বিশ্ববাজারে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
বর্তমানে দেশে ২০০টিরও বেশি রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান পাটজাত পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) এর তথ্যমতে, ২০২4-25 অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি।তবে এই সম্ভাবনাকে টেকসই করতে আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন, কৃষক পর্যায়ে পাটের মান উন্নয়ন, এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং জোরদার করা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ নেওয়া গেলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পাটজাত পণ্যের রপ্তানি দ্বিগুণ করা সম্ভব।
একসময় অবহেলিত এই শিল্প আজ আবারও দেশের অর্থনীতিতে নতুন আশার আলো জ্বালাচ্ছে। বিশ্ব যখন টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষার পথে এগোচ্ছে, তখন বাংলাদেশের পাট হতে পারে সবুজ বিপ্লবের নেতৃত্বদাতা।

